ভাইফোঁটা কি ও কেন? জানুন ভাইফোঁটা প্রচলনের ইতিকথা

ভাইফোঁটা আমাদের একটি উৎসব, সে উৎসবে বোনেরা তার ছোট ভাইদের বা বড় দাদাদের মঙ্গলের জন্য তাদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে থাকে। বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণ হয়ে থাকে,তার মধ্যে একটি ভাইফোঁটা বা রাখি বন্ধন।

Vai Fota History

ভাইফোঁটার দিন বোন এবং ভাইদের উপবাস থাকতে হয়।হিন্দুদের জন্য ভাই ফোঁটা হল ভাইবোন দের মেলবন্ধনের উৎসব। প্রতিবছর কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষে দ্বিতীয়ার এবং কালি পূজার ২য় দিন ভাইফোঁটা উৎসব পালন করা হয়। কার্তিক মাসের শুক্লাদ্বিতীয়া তিথিকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া নামে পরিচিত । দীপাবলির পর আসে ভাতৃদ্বিতীয়া।

এই দিন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁর দীর্ঘ ও সুস্থ কামনা করে থাকেন বোন।ভাইফোঁটাকে নিয়ে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিকথা, যেমনঃ-

শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রার ভাইফোঁটা

পুরাণ গ্রন্থ অনুসারে নরকাসুর নামক এক রাক্ষস ক বধ করেন কৃষ্ণ ।বধ করে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষে ২য় দিন দ্বারকা নগরীতে ফিরে যান ।শ্রীকৃষ্ণ এর প্রিয় ছিল তার বোন সুভদ্রা ।সুভদ্রা তার দাদার নরাকসুর বধএর খবর শুনে বিজয়ের উৎসব শুরু করেন আর কৃষ্ণের জন্য মঙ্গল ডালা সাজিয়ে রাখেন।

সুভদ্রা শ্রীকৃষ্ণ কে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে দ্বারিকা নগরে স্বাগতম জানায়।তাদের এই ভাই বোনে ভালোবাসাকে সম্মান জানিয়ে কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষে ২য় দিন হিন্দু ধর্মের মানুষেরা এইদিনটি রাখি বন্ধন বা ভাই ফোঁটা উৎসব হিসাবে পালন করে থাকে…।

যম ও যমুনা ভাইফোঁটাঃঃ-ঋগ্বেদের কাহিনি অনুসারে সূর্য দেবের সন্তান যম ও যমুনা প্রথম পুরুষ ও নারী ।তবে ঘটনাক্রমে যমের প্রথমে মৃত্যু হয় যম দেবতার আদেশে মৃত্যু মানুষের মৃত্যুর দূত হিসাবে যম পুরী নরকের রাজা হিসাবে নিযুক্ত হন যম। যমপুরীতে থাকার কারনে যমের সাথে অনেকদিন যাবত দেখা না হওয়ার কারনে বিচলিত হয়ে পরে যমুনা ।সে জন্য যমের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য যমুনা যমকে নিমন্ত্রণ করেন ।।

যমুনার এই ইচ্ছা পুরনের জন্য যম তার বাড়িতে আসেন ।।অনেক দিন পর ভাইকে পেয়ে যমুনা তার জন্য মিষ্টি মুখের আয়োজন করেন।।তারপর যম যখন ফিরে যাবে তখন যমুনা তাএর ভাইকে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেন ,যম খুশি হয় এবং বলে প্রতিবছর ওই দিনে অর্থাৎ কার্তিক মাসের ২য় দিন ভাইফোঁটা নিতে আসবেন যম কথা দেয় তার বোন যমুনাকে।।

কাহিনী অনুসারে যম ও যমুনা এবং শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রার কাহিনী অনুকরণ করে পৃথিবীর সকল হিন্দু ভাইবোন এদের বন্ধনের পবিত্র উৎসবটি বা ভাইফোঁটা পালন করেন।। এখানে যম ও যমুনা প্রতিভার অনেক গুরুত্ব পাওয়া যায় কারণ যমুনাকে দাওয়া কথা বা প্রতিশ্রুতি অনুসারে প্রতি বছর ওই দিনটি যম ফোঁটা নিতে যমুনার বাড়িতে যায়। তাছাড়া যম হল যমপুরীর মৃত্যুর দেবতা তিনি পৃথিবী থেকে জীবের প্রাণ নিয়ে যান ।তাই ওইদিনে বোনেরা ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে বলে যে, ,

ভাইরের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাতা।।
 যমুনা দেয় যম কে ফোঁটা ,আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
যমুনার ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হক অমর ।।

শুধু বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠান পালন করা হয় না, সকল ভারতে পালন করা হয় এই পূজাটি। ‘ভাইফোঁটা’কে নেপালের কোথাও কোথাও ‘ভাইলগন’ বা ‘ভাতিলগন’ বলে থাকেন।গোয়া মহারাষ্ট্র, ও কর্ণাটকে এই উৎসব পালন করে ‘ভাইবিজ’নামে।অন্যদিকে , ভারতের পশ্চিমে এই উৎসব ‘ভাইদুজ’ নামে ক্ষেত। এখানে নাম যে যাই বলুক তার , গুরুত্ব সকলেই সমান।

Also Read: একাদশী তালিকা ২০২৩

ভাইফোঁটা দাওয়ার নিয়ম বা রীতিনীতি

এই সময় শঙ্খ বাজানো হয় এবং হিন্দু নারীরা উলুধ্বনি করেন। এরপর বোন তার ভাইকে আশীর্বাদ করে থাকে (যদি বোন তার ভাইয়ের তুলনায় বড় হয় অন্যথায় বোন ভাইকে প্রণাম করে আর ভাই বোনকে আশীর্বাদ করে থাকে)। তারপর বোন ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি দ্বারা ভাইকে মিষ্টিমুখ করায় এবং উপহার দিয়ে থাকে।

ভাই ও তার সাধ্যমত উক্ত বোনকে উপহার দিয়ে থাকে।বোন চন্দন কাঠ জল দিয়ে ঘষে ( কেউ কেউ দইও মিশ্রিত করেন চন্দন কাঠের সাথে), নিজের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে নিচের মন্ত্রটি পড়তে পড়তে তিনবার ফোঁটা দিয়ে দেয়।।

Leave a Comment